‘আমার মেয়ের মতো ইন্টারনেট আসক্ত যেন কেউ না হয়’

সম্প্রতি রাজধানীর ধানমিন্ডর সেন্ট্রাল রোডে আত্মহত্যা করা স্বর্ণার বাবা আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধন বলেন, আমার মেয়ের মতো যেন আর কোনো ছেলে-মেয়ে ইন্টারনেট আসক্ত না হয়।

গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিল। যে তেলাপোকা দেখলে ভয় পেত। তেলাপোকা না মারা পর্যন্ত মাকে জড়িয়ে ধরে থাকত। মশারির দড়িও টানাতে পারত না। কী করে আমার সেই মেয়ে আত্মহত্যা করল, তা আমার বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, ‘শত চেষ্টা করে আমার মেয়েকে যেমন ইন্টারনেট আসক্তি থেকে ফেরাতে পারিনি। মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। দেশের আর কোনো বাবা-মা যেন এভাবে তার সন্তানকে না হারান। আমার অনুরোধ আপনারা আপনাদের ছেলে-মেয়েদের ফেসবুক এবং পাসওয়ার্ড ঘেঁটে দেখবেন। তারা কী করছে? কার সঙ্গে চ্যাটিং করছে। অন্তত ছেলে-মেয়েদের ভালো থাকার জন্য এইটুকু করবেন।’

মেয়ের শোকে কাতর এই বাবা বলেন, ‘এটা আমাদের সমাজের জন্য বড় হুমকি।’ একটি গ্রুপ আছে, যারা আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার জন্য হ্যাঙ্কআউট ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ফেসবুক ইউজ করার সময় টিনএজদের টার্গেট করে সুপরিকল্পিত গ্যাং লিডার থাকে। ছেলেমেয়েরো যাকে বলত এটা আমার গুরু বা তাদের অ্যাডমিন। যারা অ্যাডমিন সেজে বিভিন্ন ছেলে-মেয়েদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে থাকে। যারাই তাদের ফাঁদে পড়ে তাদের বিভিন্ন গেম এবং খেলায় আসক্ত করে তুলে এসব আজেবাজে অ্যাডমিন। আমার মেয়েও এমন ইন্টারনেট আসক্তিতে ছিল।’

আবেগাপ্লুত হয়ে মেয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা (স্বামী-স্ত্রী) মিলে মেয়ের কাছে ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড চাইলে সে বলত দেয়া যাবে না। সে বলত, মা যদি আমার কোনো ফ্রেন্ডের সঙ্গে চ্যাটিং করেন এবং তাদের সঙ্গে আমার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।’

সুব্রত বর্ধন তার মেয়ের কথা উল্লেখ বলেন, ‘মেয়ে যখনই সময় পেত, তখনই চ্যাটবক্সে চ্যাট করত। আমরা বিষয়টি উৎঘাটন করতে যেয়েও পারিনি।’

আইনজীবী সুব্রত বর্ধন সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে স্বর্ণা গত ৫ অক্টোবর মারা গেছে। ওর বয়স ছিল ১৪ বছর। সে হলিক্রস স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ফার্স্ট গার্ল ছিল।’

এর আগে আইনজীবী সুব্রত বর্ধন তার মেয়ের একটি ছবিও আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘যার চলে যায়, সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা।’ আদালত বলেছেন, ‘এটাত গেম নয়। এটা হলো একটি মৃত্যুফাঁদ।’

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ