ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু: ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত

অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে দিতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ইউনাইটেডের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৭ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম, ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ ও রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব।

ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান ও কাজী এরশাদুল আলম।

এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন।

রুলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোরদের ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

ক্ষতিপূরণের ওই অন্তবর্তীকালীন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ইউনাইটেড।

গত বছরের ২৮ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ারের পাঠানো বার্তায় নিহত পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা হলেন- রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহবুব (৫০)।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ মে (বুধবার) আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মূল ভবনের বাইরে হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করা সম্ভব হয়নি। তারা ভেতরেই মারা যান। আইসোলেশন ইউনিটের পাঁচজনই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভেরুন অ্যান্থনি পলের পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করেন।

মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

গত ৩০ মে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। গত ১ জুন আরও একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রাজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। পরে গত ২ জুন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদা প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনার জন্য আলাদা করে আইসোলেশন ইউনিট করতে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।

এরপর আদালত গত ২৯ জুন সমঝোতা করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তবে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগের মামলার তদন্তও দ্রুত সম্পন্ন করতে বলেছিলেন।

পরে গত ১৫ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

এর বিরুদ্ধে ইউনাইটেডের আবেদনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের যেকোনো রিট বেঞ্চে আবেদনগুলো উপস্থাপন করা যাবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আইন অনুসারে আদেশ দিতে পারবেন। সে অনুসারে উপস্থাপনের পর গত ১১ জানুয়ারি আদেশ দেন হাইকোর্ট।